» তালেবানের হাত হাত ধরে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে জাহেলিয়াত যুগ

প্রকাশিত: ০৬. সেপ্টেম্বর. ২০২৫ | শনিবার

বর্বর জাহেলিয়াত যুগ পৃথিবীতে ফিরে এসেছে তালেবানদের হাত ধরে । অব্ধকার যুগীয় একপাল মনুষ্যরূপী প্রাণীর হাতে উঠেছে আফগানিস্তানের শাসনভার। সেখানে অক্ষরে অক্ষরে পালিত হচ্ছে শরিয়ত আইন। ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগেও সে নিয়মে কোনও বদল নেই। ফলে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে মৃত্যুর কালো ছায়া নারীদের  উপর। শরিয়ত আইন অনুযায়ী পরপুরুষের ছোঁয়া হারাম, যার জেরে ভূমিকম্পে চাপা পড়া নারীদের বাঁচাচ্ছে না উদ্ধারকারীদল। পরিণতিতে বাঁচার সুযোগ থাকলেও, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে সেখানকার নারীদের।
ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং বিশাল আফটারশকের কারণে আফগানিস্তানের বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কমপক্ষে ২,২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা ক্রমেই উর্ধমুখী। নারী উদ্ধারকারীদের অভাবে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া অনেক নারীকে উদ্ধার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে যাদের মৃত্যু হয়েছে সেই নারীদের পোশাক ধরে টেনে বের করা হচ্ছে।

কারণ পুরুষদের নারীদের স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। ভূমিকম্পের পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যাচ্ছে, নারীদের অধিকার কার্যত কেড়ে নেয়ার জেরে সেখানে উদ্ধারকারী দলে নারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে ভূমিকম্পের পর যে সব নারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে না। আহত অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।

ভূমিকম্পে কপালজোরে রক্ষা পাওয়া কুনার প্রদেশের বাসিন্দা বিবি আয়েশা বলেন, “উদ্ধারকারীরা আমাদের এক জায়গায় জড়ো করে ফেলে রেখেছে। কোনও সাহায্য করা হচ্ছে না। রবিবার পূর্ব আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিকম্পের ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময় পর প্রথম উদ্ধারকর্মীদের দেখা গেছে। জরুরি উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে আহত পুরুষ ও শিশুদের উদ্ধার করার সময়, ১৯ বছর বয়সী আয়শা এবং অন্যান্য নারী এবং কিশোরী মেয়েদের একপাশে ঠেলে দিয়েছিলো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল।

একই প্রদেশের এক ভ্রমণকারী একজন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক তাহজিবুল্লাহ মুহাজেব বলেন, মনে হচ্ছে পুরুষ মেডিকেল টিমের সদস্যরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে নারীদের  উদ্ধার করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। ৩৩ বছর বয়সী মুহাজেব বলছেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন নারীরা অদৃশ্য… প্রথমে পুরুষ এবং শিশুদের চিকিৎসা করা হয়েছিল, কিন্তু নারীরা আলাদা বসে ছিলেন, চিকিৎসার অপেক্ষায়।’

ভূমিকম্পে হতাহতের লিঙ্গগত বিভাজন এখনও জানা না গেলেও, আফগানিস্তান সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২,২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং ৩,৬০০ জন আহত হয়েছেন। তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের নারীরা মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। তালেবান শাসন চার বছর আগে ক্ষমতায় ফিরে আসে। প্রথম মেয়াদের তুলনায় কম দমনমূলক দাবি করা সত্ত্বেও, তালেবান নারীদের উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।  যার মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর পরে স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আফগানিস্তানে নারীদের পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বেশি দূরে ভ্রমণের অনুমতি নেই এবং অলাভজনক এবং মানবিক সংস্থাসহ বেশিরভাগ চাকরি থেকে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার একটি তীব্র প্রভাব ইতিমধ্যেই বর্তমান ভূমিকম্পের পরে দেখা যাচ্ছে। জাতিসংঘের সাথে সম্পর্কিত সংস্থাগুলোতে কর্মরত আফগান নারীরা অতীতে একাধিকবার হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন, নারী  কর্মীদের অস্থায়ীভাবে বাড়ি থেকে কাজ করতে  বাধ্য করা হয়েছে। গত রবিবারের ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়াদের উদ্ধার অভিজেঁর মধ্যেই আফগানিস্তান একের পর আফটারশকের মুখোমুখি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার, ৫.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প দেশটিতে আঘাত হেনেছে।

 

[hupso]