- জয় বাংলা শ্লাোগানে মিছিল করার অপরাধে ছাত্রলীগের দুই নেতা আটক
- কানাইঘাটে ছাত্রদল নেতা খুন
- ড.ইউনুস গংদের পদত্যাগের দাবীতে লন্ডন যুবলীগের সমাবেশ
- জকিগঞ্জে মালামালসহ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ
- আলজেরিয়া বাংলাদেশে বানিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায়
- সিকৃবিতে বাঁধনের এক যুগ পুর্তি অনুষ্ঠিত
- সিলেট এমএ বিমান বন্দরকে পুর্নাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দাবীতে সভা অনুষ্টিত ।
- মারা গেছেন মুনতাহার খুনি মার্জিয়ার নানী
- সিলেট এয়ারপোর্ট সড়কে ট্রাক-চাপায় একজন নিহত
- সিলেটে ‘মৃ্ত ব্যক্তি থানায় হাজির, স্ত্রী লাপাত্তা
» সুনামগঞ্জ থেকে যেভাবে উদ্ধার হলেন ভার্সিটি পড়ুয়া হিমেল
প্রকাশিত: ২৫. জানুয়ারি. ২০২৪ | বৃহস্পতিবার
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে অপহৃত হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল। প্রায় এক মাস পর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার মেঘালয় পাহাড় থেকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তবর্তী টাঙ্গুয়া হাওর থেকে ৪ জন এবং রাজধানীর উত্তরা থেকে ১ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল। রাত ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) আ ন ম ইমরান খান।
র্যাব সূত্র জানায়, প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে অপহরণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেলকে। অপহরণের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে। সেখান থেকে অপহরণকারীরা ভারতীয় সিম দিয়ে ওয়াটসঅ্যাপে কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে হিমেলকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পাঠাতো মায়ের কাছে।পরে হিমেলের মা বিষয়টি ডিবি, র্যাব পুলিশকে জানায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপনে অভিযানে নামে এবং বিষয়টি ভারতীয় মেঘালয় রাজ্যের পুলিশকে অবগত করে। ভারতীয় পুলিশ মেঘালয় পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে এর সঙ্গে জড়িত ভারতীয় এক অপহরণকারীকে আটক করে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের মূলহোতা সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় অপহৃত শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার মেঘালয় পাহাড় থেকে উদ্ধার করে র্যাব।
যেভাবে অপহৃত হন হিমেল
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি’র (আইইউবিএটি) ছাত্র কাজী হাসিবুর রহমান হিমেল। রাজধানীর উত্তরায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
চার মাস আগে হিমেলের বাবা মারা যান। এরপর পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করেন তিনি। পরিবারের নানা ব্যবসাপাতিও দেখভাল করছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন হিমেলের বাসায় প্রাইভেটকার চালক হিসেবে কাজ করে আসছেন সামিদুল। নতুন কি কি ব্যবসা করা যায়- এই নিয়ে গাড়ি চালকের সঙ্গে মাঝে মাঝে হিমেলের কথা হত। মাস দেড়েক আগে শেরপুরে একটি ব্যবসায়িক কাজে যেতে হিমেলকে প্রস্তাব দেন তার গাড়ি চালক।
শেরপুরে যাওয়ার বিষয়টি ঠিকঠাক হওয়ার পরপরই মালিককে অপহরণকে করে তার পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ছক সাজিয়ে রাখেন চালক সামিদুল। একাধিক দফায় গোপন বৈঠক করে পূর্ব পরিচিত আবদুল মালেক নামে আরেক চালকসহ কয়েকজনকে ভাড়া করেন তিনি।
ব্যবসায়িক কাজে ২৬ ডিসেম্বর শেরপুরের উদ্দেশে সামিউলসহ যাত্রা শুরু করেন হিমেল। গাজীপুরে পৌঁছার পরপরই দু’টি ছক মোতাবেক দু’টি মোটরসাইকেল হিমেলের গাড়ি গতিরোধ করে। এরপর হিমেলের গাড়িতে অপহরণকারীদের কয়েকজন উঠে তাকে ভয়ভীতি দেখান। দুই মোটরসাইকেল দিয়ে অনুসরণ করে তাকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ির সীমান্তে নিয়ে যায়। এরপর সীমান্তের ওপারে নিয়ে মেঘালয়ের গহীন বনে জিম্মি করে রাখা হয়। অপহরণকারীদের কেউ কেউ বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। তবে অধিকাংশরা সীমান্তের ওপারেই অবস্থান নেন। সেখান থেকেই মুক্তিপণের দেন দরবার করতে থাকেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন দুপুর থেকে হিমেলের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়ে বন্ধ পান তার মা তহুরা হক। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্তানকে না পেয়ে ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ করেন। এরই মধ্যে একাধিক ভারতীয় মোবাইল নাম্বারের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তহুরার ফোনে কল করে ছেলের মুক্তিপণের দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। দফায় দফায় ফোন করার পর শেষ পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকায় দফরফা হয়। এই অর্থ না দিলে হিমেলকে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। মুক্তিপণ দিতে গড়িমসি করায় মেঘালয়ের পাহাড়ে গাছে ঝুলিয়ে অর্ধনগ্ন করে হিমেলকে মারধর করা হয়। পাথরের ওপর শুইয়ে চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। এসব নির্যাতনের ভিডিও এবং অডিও পরিবারের কাছেও পাঠানো হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান জানান, ময়নসিংহের হালুয়াঘাট, নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানাধীন টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের ব্যাপারে অনেক তথ্য পেয়েছিল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার খবর পেয়ে এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারটি গাজীপুরের বাসন এলাকায় ফেলে যায় মাসুদ নামে চক্রের এক সদস্য।
গোয়েন্দা ও ডিজিটাল তথ্য পর্যালোচনা করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ভিকটিম ও জড়িতদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ বিষয়টি ভারতের পুলিশকে অবহিত করেন। মেঘালয় পুলিশ সেখানকার দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার পাহাড়ি এলাকায় একাধিক অভিযান চালায়। জুতা, ব্যাগ, মোবাইল সেট এবং অনেক মোবাইল নাম্বারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করে তারা।
ডিবির ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, অপহরণকারী চক্রে এখন পর্যন্ত ৯ জনের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। মূল পরিকল্পনায় ছিল হিমেলের গাড়িচালক। আর অপহরণের ঘটনাটি বাস্তবায়ন করেন মালেক। গত ডিসেম্বরে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর হিমেলের সঙ্গে অপহরণ পরিকল্পনায় যুক্ত হন। মেঘালয়ের পাহাড়ে অবস্থানকালে কিছু দিন অপহরণকারীরা খাবার সংকটে পড়েন। এরপর তারা খাসিয়া পল্লীতে গিয়েও সব লুটপাট করেছেন। মেঘালয় পুলিশ ধারাবাহিক তৎপরতা চালানোর পর অপহরণকারীরা বাংলাদেশের চলে আসেন। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
র্যাব কর্মকর্তা আ ন ম ইমরান খান জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তবর্তী টাঙ্গুয়া হাওর থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৪ জন এবং ঢাকার উত্তরা থেকে একজন সহ অপহরণ চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। অপহরণকারী ২ জনকে তাহিরপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে এবং ২ জনকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। এছাড়া তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকি।
[hupso]