» আজ কমপ্লিট শার্টডাউন জরুরী সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ থাকবে

প্রকাশিত: ১৮. জুলাই. ২০২৪ | বৃহস্পতিবার

দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটসহ সারা দেশে চলছে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলন। প্রথমে আন্দোলন অহিংস থাকলেও রবিবার (১৪ জুলাই) রাত থেকে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠে  সিলেট। 
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ৬ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বুধবার (১৭) জুলাই দিনভর  সিলেট ছিল উত্তাল। এছাড়া ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরেও পুলিশের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাট-ডাউন) কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

 

বুধবার পৌনে ৮টায় শিক্ষার্থী আন্দোলনের ঢাকার সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 

কর্মসূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন চলবে না।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট  শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।”

 

দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে কর্মসূচি সফল করতে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি সফল করুন।”

 

এ বিষয়ে  সিলেটের আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বুধবার রাতে সিলেটভিউ-কে বলেন- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় অবস্থান নিবো। জরুরি সেবা ছাড়া আর সব বন্ধ থাকবে। আশা করছি-  সিলেটের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এটা অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সবাই অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।

 

সিলেটে বুধবার দিনভর যা ঘটলো:
চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলনে বুধবার (১৭ জুলাই)  সিলেট ছিলো বেশ উত্তপ্ত। আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি মাঠে ছিলো আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। সতর্ক অবস্থানে ছিলো পুলিশ।মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আন্দোলনে ৬ জন মারা যাওয়ার পর সিলেটের শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর অবস্থানে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে সে নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে   সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে ৬ নিহতের স্মরণে বুধবার বেলা দুইটায় ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা পড়ে।

 

এরপর ২টা ২০ মিনিটে আবাসিক হল ছেড়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমান। শাহপরাণ হল থেকে বের হয়ে একটি সাদা মাইক্রোবাসযোগে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তারা। এসময় তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ৫-৭ জন নেতাকর্মীকে দেখা যায়।

 

এছাড়া শাবির সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আজীবন নিষিদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা।

 

বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালায় শিক্ষার্থীরা। হলটির কয়েকটি কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশিয় অস্ত্র ও মদের বোতল জব্দ করে তারা।

 

বিকাল সাড়ে ৬টায় উদ্ধারকৃত অস্ত্র নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন- দেড় শতাধিক মদের বোতল, ১টি শর্টগান, ১টি রিভলবার, ৩টি চেইন, ১ শ স্টিলের পাইপ, ১০টি রামদা, ১২টি চাকু, হাতুড়ি ৩টা ও কিছু গাঁজা পেয়েছি। শুধু শাহপরাণ হলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে এসব আমরা জব্দ করেছি। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে আর তল্লাশি চালাতে পারিনি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা বাকি হলগুলোতে তল্লাশি করবো। আমরা জানতে পেরেছি- তল্লাশি শুরু হয়েছে জানতে পেরে সন্ত্রাসীরা অনেক অস্ত্র সরিয়ে ফেলেছে।

 

এর আগে বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা আড়াইটায় কোটার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় মহানগরের রেজিস্টারি মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমমনা দলগুলো’ গায়েবানা জানাযার নামাজে প্রস্তুতি নিলে পুলিশ এসে বাঁধা দেয়। এ সময় পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তারা সেখান থেকে সরে এসে কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গনে গায়েবানা নাজাযার নামাজ আদায় করেন।

 

তার আগে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে  সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষের সময় এসময় বন্দর ও জিন্দাবাজার এলাকার ব‍্যবসায়ী এবং পথচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত শাটার লাগিয়ে দোকানের ভেতরে অবস্থান করেন।

 

অপরদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী রেজিস্টারি মাঠে  সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজ অনুষ্ঠিত হয়।

 

এদিকে আজ সিলেটে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগও। বুধবার (১৭ জুলাই) জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়- কোটাবিরোধী আন্দােলনের নামে বৃহস্পতিবার তথাকথিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মাধ্যেম সারাদেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজপথে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী  সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সিলেট জেলা পরিষদের সামনে “অবস্থান কর্মসূচি” গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। এতে  সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক অ‍্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান।

 

[hupso]