- সিলেট সীমান্তে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
- আমাজনের জঙ্গলে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায় নতুন এক সম্প্রদায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে
- আওয়ামীগের করা প্রকল্পগুলো ৯৫ ভাগই বাতিলের তালিকায়
- সিলেট- সুনামগঞ্জ সীমান্তে ৩ কেটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
- শাপলা বিল থেকে ফেরার পথে তামাবিল সড়কে প্রাণ হারালো তিন তরুণ
- সিলেট আদালত পাড়ায় পুলিশের মাঝখানে নূুরুকে পেটালেন তারা
- সিলেট-১ সংসদীয় আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করলো বিএনপি
- বিজয় দিবসে নুপুর বেতার শ্রোতা ক্লাবের পুষ্পার্ঘ্য অর্পন
- সিলেটে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন
- আজ সিলেট মুক্ত দিবস
» তিন মেয়রের ব্যর্থতার পর ব্যর্থ যৌথবাহিনীর প্রচেষ্টা
প্রকাশিত: ০৩. নভেম্বর. ২০২৪ | রবিবার
কোনোভাবেই দখলমুক্ত হচ্ছেনা ফুটপাত ।
তিন মেয়রের ব্যর্থতার পর এবার ব্যর্থ হলো যৌথবাহিনীর চেষ্টা
হকারদের বাগেআনা যাচ্ছেনা কিছুতেই। সকালে অভিযানে খালি হলে দুপুরেই ফুটপাত দখল। হকাররা কিছুতেই ছাড়ছেন না সড়ক-ফুটপাত, প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সড়কে থাকে অবৈধ গাড়ি পার্কিং।২ফুটপাতে অর্ধেক দোকানদার এবং তাদের বাহন মটর বাইক বা বাইসাইকেলে দখলে রাখে , বাকী অংশে হকার।
নগরবাসী ছাত্রছাত্রী সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, পথচারী, প্রশাসন, নগরভবন কর্তৃপক্ষ সবাই চান সড়ক-ফুটপাত দখলমুক্ত হতে। কিন্তু অদৃশ্য কোনো শক্তির বলে যেন সড়ক-ফুটপাত থেকে সরানো যায় না হকারদের। উচ্ছেদ করা যায় না অবৈধ গাড়ি পার্কিং। বলা যায়- এই দুই ক্ষেত্রে ব্যর্থই হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক তিন মেয়র।
সর্বশেষ যৌথ বাহিনীর অভিযানেও দখলমুক্ত হচ্ছে না সিলেট মহানগরের ব্যস্ততম এলাকার সড়ক-ফুটপাত। বরং এবার ‘বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করে তারা চাচ্ছেন ‘বিশৃঙ্খলার স্থায়ী স্বীকৃতি’। সপ্তাহে ৫ দিন বিকালে এবং বাকি দুদিন পুরো সময় ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তারা। এটিসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে রবিবার (৩ নভেম্বর) সিলেট মহানগরের জালালাবাদ পার্কের সামনে সভাও করেছেন কতিপয় হকার। পরে তারা দাবিগুলো লিখিত আকারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে দেন।
তবে পুলিশ জানিয়েছে- এ ক্ষেত্রে কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না। সিলেটে অবৈধ হকার উচ্ছেদে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সিসিকের সাবেক দুই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মহানগরের হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রথমে আরিফুল হক ও পরে আনোয়ারুজ্জামান নগরভবনের পেছনের লালদিঘীরপাড় মাঠে তাদের পুনর্বাসনের জন্য শেড তৈরি করে দিয়ে সেখানে বসিয়ে সড়ক ও ফুটপাতকে জঞ্জালমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে সেখানে গিয়ে কিছুদিন পরই হকাররা ফের সড়ক-ফুটপাত দখল করে নেন।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন হকাররা। প্রত্যেক সড়কের- বিশেষ করে বন্দরবাজার-জিন্দাবাজারসহ তালতলা থেকে একেবারে আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত পুরোটাই সড়কের অর্ধেক এবং আস্ত ফুটপাত দখল করে রাত-দিন ব্যবসা চালাতে থাকেন হকাররা। এ অব্স্থায় আগস্ট মাসের শেষ দিকে প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন মেয়রবিহীন সিটি করপোরেশন হকারদের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে কঠোর বার্তা প্রদান করে। বলা হয়- মহানগরের সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন সিটি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তি, দু-তিন দিন মহানগরে মাইকিংও করা হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর অ্যাকশনে নামে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। তবে ছাত্র-জনতা সঙ্গে ছিলো না। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিসিকের প্রশাসক ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি)। এদিনই শুধু অনেকটা হকারমুক্ত দেখা যায় মহানগর। কিন্তু দু-তিন দিন পর অবস্থা হয়ে যায় তথৈবচ।
পরবর্তীতে ১৭ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর- এই ৭ দিন হকারদের সময় বেঁধে দেন এসএমপি’র নতুন কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা)। এ সময়েও মাইকিংও করা হয় মহানগরে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করে সিসিক। দু-তিন দিন হকাররা কিছুটা সরে থাকলেও আবারও তারা দখল করে নিয়েছেন সড়ক-ফুটপাত। দুপুর থেকেই তারা বসে যান পণ্য নিয়ে।
সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর সিসিক কর্তৃপক্ষ, মহানগরের ব্যবসায়ী ও হকার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেন এসএমপি কমিশনার। এ বৈঠকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত হকারদের সময় বেঁধে দিয়ে ২৭ অক্টোবর থেকে যৌথ বাহিনী অভিযানে নামার ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে মহানগরের ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যৌথ বাহিনী অভিযানেও নামে। অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও।
নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিলো- এবার হয়তো দখলমুক্ত হতে পারে সিলেটের সড়ক ও ফুটপাত, কমতে পারে ভোগান্তি। কিন্তু অবস্থা সেই আগের মতোই। অভিযানের ২-৩ দিন কিছুটা দখলমুক্ত ছিলো সড়ক-ফুটপাত। পরে পুরনো চিত্রে ফিরে মহানগরের রাস্তাঘাট। বেলা গড়ানোর পর থেকেই মহানগরের ব্যস্ততম বন্দর, জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাসহ বিভিন্ন জায়াগয় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা, মধ্যরাত পর্যন্ত করেন বেচা-বিকি। ফলে রাত-দিন এসব এলাকায় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ভোগান্তি পোহান যাত্রীসাধারণ ও নগরবাসী। ফুটপাত-রাস্তা দিয়ে স্বস্তিতে হাটতে পারেন না পথচারীরা। সড়কের আয়তন কমে গিয়ে একটু পরপরই লাগে যানজট। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় বন্দরবাজারস্থ সিলেট প্রধান ডাকঘরের সামনে দিয়ে গেলে। এখানে প্রতিদিন বিকাল থেকে প্রায় পুরো রাস্তা দখল করে বসে যান হকাররা। মধ্যরাত পর্যন্ত হাক-ডাক দিয়ে বেচা-বিকি করেন সবজি-মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য। এছাড়া সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের ভোগান্তি তো আছেই। আর এবার হকাররা স্থায়ীভাবে আসন গড়তে চাচ্ছেন ফুটপাতে, চাচ্ছেন ‘বিশৃঙ্খলার স্বীকৃতি’।
‘বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র আহ্বায়ক মো. রুহুল আমিন রুবেল বলেন- আমরা অনেক ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বৈষম্যের শিকার। সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি রকিব আলীর উপর ৫ আগস্টের পর মামলা হয়। তিনি আত্মগোপনে চলে গেলে সাংবিধানিকভাবে এ সংগঠনের পরিচালনার দায়িত্ব সহ-সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের কাছে যাওয়ার কথা। কিন্তু সিলেট মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ জোরপূর্বক সিলেট মহানগর হকার ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি বনে যান। সর্বোপরি তিনিও সাবেক সভাপতি রকিবের মতো অনিয়ম করে যাচ্ছেন। ফলে বৈষম্যের শিকার আমরা হকাররা গত শুক্রবার ‘বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’ নামে কমিটি গঠন করেছি এবং কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে সভা করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তথা হকারদের স্থায়ী পুর্নবাসন করতে হবে এবং মাঠের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। ২. অস্থায়ী হকার মার্কেটের যাতায়াতের প্রস্তাবিত সকল রাস্তা তৈরি করে দিতে হবে। ৩. আমাদের স্থায়ী পুনর্বাসনকৃত মাঠে দোকান তৈরি ও নিজস্ব পৃথক পৃথক মিটারসহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ৪. প্রতিদিন পিক আওয়ারের পরে অর্থাৎ বিকেল ৫ টা থেকে ফুটপাতে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। ৫. প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবার ও শনিবার পূর্ণ দিন ফুটপাতে ব্যবসার সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সর ব্যবসা করলে আমরা সবাই সিসিক থেকে ট্রেড লাইসেন্স করব। এতে করে সিসিকের রাজস্বও বাড়বে। আর এই ট্রেড লাইসেন্সের ফিস বাৎসরিক, মাসিক, সাপ্তাহিক অথবা দৈনিক হিসেবেও আদায় করা হতে পারে। ৬. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তথা হকারদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৭. বিগত সময়ে অস্থায়ী হকার মার্কেটে দোকান বরাদ্দে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। তাই সকল দোকান লটারির মাধ্যমে পুনরায় বণ্টন করতে হবে। ৮. মাঠের ভেতরে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। ৯. এসব দাবি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
ফুটপাত বা সড়ক দখল করে ব্যবসা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে; এমনটি করা উচিৎ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. রুহুল আমিন রুবেল বলেন- মানবিকতার স্বার্থে এটি বলেছি। আমাদের দাবি ছিলো- লালদিঘীরপাড় মাঠে সামনের দিকে কাপড়-জুতা-কসমেটিক্স এসবের দোকান এবং পেছন দিকে মাছ-তরকারি এসবের দোকান বসানোর জন্য। কিন্তু আমাদের কথা উপেক্ষা করে সামনের দিকে মাছ-তরকারির দোকানগুলো বসানো হয়েছে। ফলে সারা দিনে ৫০০ টাকার মালও বিক্রি করতে পারেন না কাপড়-জুতা ব্যবসায়ীর। আর এটি বৈষম্য হচ্ছে। তাই আমরা ফুটপাতে বসে ব্যবসা করার দাবি জানাচ্ছি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন- ‘বৈষম্যবিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ব্যানারে কিছু ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ৯টি দাবিসম্বলিত স্মারকলিপি বিভিন্ন দপ্তরে পেশ করেছেন, আমাদেরকেও দিয়েছেন। তাদের কিছু দাবি যৌক্তিক, কিছু দাবি বেআইনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই- রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসার পণ্য নিয়ে বসা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ দাবি কখনো মেনে নেওয়া হবে না। সড়কে কোনো হকার বসলেই পুলিশ আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে লালদিঘীরপাড়ে পুরোপুরি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে যত দাবি আছে সেগুলো বিবেচনায় নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে।