» সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা আক্তার শানুর বিরুদ্ধে বাসা দখলের অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৬. জানুয়ারি. ২০২৫ | রবিবার

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা

বেগম শানু, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বাসা দখল, হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে শিক্ষানবীশ আইনজীবী লোকমান হোসেন। রোববার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সিলেটের খাবার ও রেস্তোরাঁ

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লোকমান হোসেন জানান, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নই। শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে কাজের পাশাপাশি আমার বড় ভাই ফটিক মিয়ার ব্যবসা দেখাশোনা করি। আমি বিনা অপরাধে দীর্ঘ ২ মাস ১০ দিন কারাবরণ করেছি। কারাগারে যাওয়ার পর আমাকে যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে প্রচার করতে পুরো নগরীতে পোস্টারিং করা হয়। এটি করেছেন সিলেটের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানা বেগম শানু, তার ভাসুর মো. নুরুল ইসলাম, ভাই বেলাল আহমদ, ছেলে ছাত্রলীগের পদধারী নেতা রায়হান, রেদওয়ান, ছেলের বন্ধু রিপন তালুকদার ও ছাত্রদল নামধারী ভুয়া সাংবাদিক রাজন আহমদ আরিয়ান।সিলেটের খাবার ও রেস্তোরাঁ

শানু, তার ছেলে, ভাসুর, ভাই এবং ছেলেদের বন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিলেটের একাধিক থানায় হত্যা, বিস্ফোরক ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। ছেলে রায়হান ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে অংশ নেয়। ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে শানুর আরেক ছেলে রেদোয়ান অপরাধের রাজ্য গড়ে তুলেছে। শানুর স্বামী সিলেটের শীর্ষ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী তাজুল ইসলামকে জনতা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। একই অপরাধে তার আরেক ছেলেকে হত্যা করে এবং অপর ছেলেকে গুরুতর আহত করে জনতা।

তিনি জানান, শানু, তার ভাসুর, ভাই ও ছেলে এবং ছেলের বন্ধুরা মিলে গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে আমাকে ৩টি রাজনৈতিক মামলায় জড়ায়। মামলার বাদীদের আমি নিজেও ছিনি না। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার বড় ভাই ২টি মামলার বাদীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে চেনেন না বলে জানান।

লোকমান হোসেন জানান, নগরীর খুলিয়াটুলায় নীলিমা আবাসিক এলাকার ৫২/৫ নং বাসাটি ক্রয় সূত্রে মালিক আমি। আমি মৃত মুকিত মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলামের মাধ্যমে মৃত নুরুল হুদা চৌধুরীর পুত্র তারেকুল হুদা চৌধুরী গংদের কাছ থেকে বাসাটি ক্রয় করি। নুরুল ইসলামের সাথে ১৬/০৪/২০২১ ইং তারিখে ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করে ৩৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। নুরুল ইসলাম উক্ত টাকার মধ্যে ৬ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা এসএ রেকর্ডীয় মালিক গোলাম সরোয়ার চৌধুরী, মোহাম্মদ বক্স চৌধুরী ও সাহাদত বক্ত চৌধুরীর উত্তরাধিকারী ৫ জনকে পরিশোধ করে এবং আমি ও আমার ভাই ১৮/০৫/২০২১ ইং তারিখে এস.এ রেকর্ডীয় মালিকদের কাছ থেকে সাফকবালা দলিল সম্পাদন করে বাসাটি ক্রয় করি। এছাড়া, শাহানা বেগম শানুকে ২৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার সাথে বিগত ১৯/০৭/২০২১ ইং তারিখে ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করি। অপর দখলকার মো. রকিবের সাথে বিগত ০৪/০৮/২০২১ ইং তারিখে এক চুক্তিপত্র সম্পাদন করে তাকে ১২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। এভাবে, আমি মোট ৭৪ লক্ষ টাকা সকল পক্ষকে পরিশোধ করি। বাসার দামের অতিরিক্ত ৯ লক্ষ টাকা নুরুল ইসলাম আমার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেই বাবত আমাকে ৯ লক্ষ টাকার ৩টি চেক প্রদান করে।

তিনি অভিযোগ করেন, রায়হান, নুরুল ইসলাম, রিপন তালুকদার, শাহানা বেগম শানু, রেদোয়ান ইসলাম ও বেলাল আহমদসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন গত ৬ আগস্ট বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই বাসায় থাকা ভাড়াটেদেরকে বের করে দেয় এবং বাসাটি দখল করে। এমনকি বাসার ভাড়াটেদের মালামালগুলোও তারা আটকে রাখে। পরবর্তীতে গত ১০ জানুয়ারি তারা আমার কাজিরবাজারস্থ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসে উক্ত বাসার জন্য আমার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা বলে, যদি চাঁদা না দেই তাহলে উক্ত বাসার মধ্যে থাকা মালামাল ও বাসার ক্ষতি করবে। আমি রাজি হলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে খুন, গুম ও মিথ্যা মামলার হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় আমি গত ২১ জানুয়ারি এসএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় শানুর ভাসুর মো. নুরুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু বাকিদের এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

তিনি জানান, ২৫/০১/২০২২ ইং তারিখ বেলা ১১টার দিকে আমি আমার স্ত্রী আমিনা খাতুন লতা, আমার ২ ছেলে শাফি ও শফি এবং আমার ভাগ্নি বন্যা বেগমকে নিয়ে ক্রয়কৃত বাসাটি দেখতে যাই। এ সময় শানুর ছেলে রায়হান চায়নিজ কুড়াল নিয়ে ও অপর ছেলে রেদোয়ান দা নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে। আমি তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে শানু ও তার ছেলে বাইরে থেকে ঘরের গ্রিল বন্ধ করে দেয়। উপায়ান্তর না দেখে আমি মোবাইলে আমাদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। শানু ও তার সহযোগীরা এ সময় আমাদেরকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। তাদের পেট্রোল বোমার আঘাতে আমার ভগ্নিপতি হালিম মিয়া, আমার চাচী মনিকা বেগম ও ভাতিজি পারভীন বেগম গুরুতর আহত হন। আমার বড় ভাই বিষয়টি কোতোয়ালী থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করে ও আহতদেরকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে কেতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করি।

লোকমান হোসেন জানান, আমার বড় ভাই একজন ব্যবসায়ী এবং গুরুতর অসুস্থ লোক। তার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে তিনি বাসাটি ক্রয় করেছেন। বাসার মূল্য আমরা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিয়েছি। শানুসহ বাসার মালিক দাবিদার সবাই তাদের প্রাপ্য টাকা পেয়ে গেছেন। অথচ আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শানু ও তার ভাসুর নুরুল ইসলাম এখনও আমাদের বাসাটি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার পরিবারকে হয়রানি করছেন। আমি অবিলম্বে শানু, তার ছেলে রায়হান ও রেদোয়ান এবং শানুর ভাসুর নুরুল ইসলাম, ভাই বেলাল, ছেলের বন্ধুসহ অপরাধ চক্রের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

[hupso]