» আকর্যনীয় ফিগার ধরে রাখতে যা খাবেন যা করবেন

প্রকাশিত: ০৬. অক্টোবর. ২০২৩ | শুক্রবার

আগেকার যুগে আকর্ষণীয় ফিগারের মানুষ বলতে নাদুস-নুদুস চেহারার মানুষদের বোঝানো হতো। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। আজ, সুস্বাস্থ্য মানে একটি সুস্থ, ফিট এবং আকর্ষণীয় ফিগার যা যেকোনো পোশাকের সাথে মানানসই এবং সবাইকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
আসুন জেনে নিই কিভাবে কি করব

সকালে ঘুম থেকে উঠুন এবং প্রার্থনা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে দিন শুরু করুন ঃ
বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন তাদের স্বাস্থ্য অন্যদের তুলনায় বেশি ভাল থাকে।সকালের আবহাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। কারণ এ সময় বায়ু দূষণ কম থাকে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠলে সারাদিনের কাজের প্রতি আপনার উৎসাহ বেড়ে যায়। যার ফলে আমাদের শারীরিক ফিটনেস ঠিক রাখা সহজ হয়। 

আমাদের শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন প্রার্থনা করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  প্রার্থনার মাধ্যমে দিন শুরু করলে আমাদের শারীরিক কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যায় সেই সাথে আমাদের শারীরিক ফিটনেসও ঠিক থাকে। তাই সুস্থতার জন্য প্রার্থনার কোনো বিকল্প নেই।

কমবেশি আমরা সবাই জানি যে ব্যায়াম আমাদের শরীরের ফিগার ঠিক রাখার জন্য কতটা উপকারী।  শরীরের ফিগার ঠিক রাখার জন্য শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনই আমাদের শরীরের ফিগারও খারাপ দেখায়।আর ওজন নিয়ন্ত্রণে বা ফিগার ঠিক রাখতে ব্যায়ামের চেয়ে ভালো কোন উপায় নেই।

সবচেয়ে ভালো হয় সকালে হাঁটার অভ্যাস করলে। তবে সময়ের অভাবে অনেকেই সকালে হাঁটার সময় বের করতে পারেননা। তাই আপনি দিনের যেকোনো সময় ৩০থেকে ৪৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।

গৃহস্থালি বা  ঘরের কাজগুলি নিজে করার চেষ্টা করুন ঃ

আগেকার দিনের মেয়েরা রান্নাঘরে বসে বসে প্রায় সব ধরনের কাজ করে থাকত।আর বসে থাকলে একটাই কাজ করা যায়। তবে আপনি যদি দাঁড়িয়ে কাজ করেন তবে আপনি একই সময়ে রান্না করতে, থালা-বাসন ধোয়া, কাটা-কাটি এবং রান্নাঘরের অন্যান্য কাজগুলিও করতে পারেন। এর মধ্যে একটু হাঁটা-হাটিও হয়ে থাকে যার মাধ্যমে পায়ের ব্যায়াম হয়ে থাকে এবং হাড় মজবুত রাখে।আর যে কারণে শরীরের চর্বি সহজে জমতে পারে না।
শরীরও ফিট ও সুন্দর হয়। বিশেষ করে মেঝে বা সিঁড়ি মুছলে স্বাভাবিকভাবেই পেটে অনেক চাপ পড়ে, যার ফলে পেটের চর্বি সহজেই কমে যায়। নিয়মিত মেঝে মুছলে পেট মসৃণ হয় এবং কোমরের আকৃতিও সুন্দর হয়।

শরীরের সৌন্দর্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মোটা পেট বা মোটা স্বাস্থ্য যা খুব দ্রুত বাড়ে। মেঝেতে বসে নিজের কাপড় ধোয়লে পেটে চাপ পড়ে যার কারনে পেটে মেদ জমে কম।জানালা বা দরজার কাঁচ পরিষ্কার করলে হাত উপরে নিচে নাড়াতে হবে, এতে শরীরের অন্যান্য অংশও নাড়াচাড়া হয়। তাই জানালা পরিষ্কারের পাশাপাশি হাতের পেশি মজবুত হয় এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়। 

পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন ঃ

ফিগার ঠিক রাখার জন্য, আপনাকে অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট তৈরি করে নিতে হবে। মূলত প্রতিদিনের খাবার থেকেই আমাদের শরীর সব ধরনের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের পাশাপাশি শাকসবজি এবং ফল, বাদাম, কাজু, আখরোট অন্তর্ভুক্ত করুন। কারণ শাকসবজি ও ফলের ভিটামিন আমাদের শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে সাহায্য করে। 

যতটা সম্ভব অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।দিনে পাঁচটি ফল ও সবজি খেতে পারেন। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার যেমন হালকা রুটি এবং দুগ্ধজাত খাবার খান।শিম, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম এবং অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খান। সহজে হজমযোগ্য খাবার খেলে ভালো।

লাঞ্চ বা ডিনারে একবার আপনার প্রিয় সবজি দিয়ে  তৈরি করা সালাদ দিয়ে করুন।এটি আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেবে এবং আপনাকে ফিট ও সুন্দর রাখবে।খাওয়ার সময় ভালো করে চিবানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন ঃ

আমাদের দেহের প্রতিটি কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সচল রাখতে ও ফিট রাখতে পানি অপরিসীম ভূমিকা পালন করে থাকে। পানি আমাদের শরীরে মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে। দীর্ঘদিন পানিশূন্যতায় ভুগলে লিভারের সমস্যা থেকে শুরু করে আরও জটিল রোগ দেখা দিতা পারে।

তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। সাধারণত প্রতিদিন আট থেকে বারো গ্লাস বা আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান করা আদর্শ বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রত্যেকের শারীরিক চাহিদা আলাদা। তাই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করাই ভালো।

পরিমিত ঘুমের চেষ্টা করুন ঃ

ঘুমকে আমাদের শরীরের পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাও বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন আমাদের শরীর প্রচুর ক্যালরি খরচ করে থাকে। যা শুধু খাবার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। এছাড়াও, পরিমিত ঘুম আপনার মানসিক চাপ কমাতে আর সেয় সাথে ফিগার ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।

আপনি যাই করুন না কেন, আপনি পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। বিশ্রামের অভাবে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্বি জমে। তবে বিশ্রাম মানে দিনরাত বসে থাকা নয়। সারাদিনের পরিশ্রমের পর আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে ঘুমের সময় মস্তিষ্কের এই ঘাটতিগুলো ধীরে ধীরে পূরণ হয়। তাই প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ভালো ঘুম পাওয়া খুবই জরুরি।

মানসিকভাবে ভালো থাকুন ঃ

সুস্থ ও ফিট রাখার জন্য নিজেকে খুশি রাখাটাও খুব জরুরি। কারণ মনের সাথে শরীরের গভীর একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাই মন ভালো না থাকলে শরীরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেকে মানসিকভাবে ফিট রাখতে কাজের বাইরে বিনোদনের জন্য কিছু সময় দেওয়া দরকার।

 তবে সব ধরনের বিনোদন যে স্বাস্থ্যকর বিনোদন তা কিন্তু নয়। স্বাস্থ্যকর বিনোদন বলতে বুজায় খেলাধুলা, পড়া, ভ্রমণ, টিভি বা কম্পিউটারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানকে বোঝানো হয়। এছাড়াও পরিবারের সাথে ভাল সময় কাটানো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যেসব বিনোদন আপনার মনকে প্রফুল্ল রাখে সেগুলোকে বলা হয়ে থাকে স্বাস্থ্যকর বিনোদন।

সবসময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকার চেষ্টা করুন ঃ

আপনি যদি বেকটেরিয়ি বা জিবাণু থেকে বাঁচতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে। খাওয়ার আগে এবং পরে, বাইরে থেকে আসার পরে, যে কোনও কাজ শুরু করার আগে এবং পরে আপনার হাত সাবান দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহৃত কাপড় ও ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হবে।

 

পরিবেশ বান্ধব একটি বাগান করুন ঃ

পরিবেশ বান্ধব একটি শাকসবজি, ফলমূল এবং সুন্দর ফুলের বাগান করতে পারেন।বাগান করা একটি বিষয় বটে।কিন্তু এই কাজটি ভালোভাবে করতে, অর্থাৎ শাকসবজি, ফলমূল এবং সুন্দর ফুল ফলাতে শরীরের অনেক পরিশ্রম লাগে।তাছাড়া প্রকৃতির সঙ্গে বাগান প্রেমীদের রয়েছে একটি গভীর সম্পর্ক। যার ফলে বাগান করা এবং এর থেকে কিছু ভোগ করা শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত ডিভাইসের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন ঃ

বর্তমানে  শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব বয়সের মানুষের হাতে স্মার্টফোন থাকা খুবই সাধারণ একটি বিষয়।বর্তমানে একটি শিশু জন্ম থেকেই বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস নিয়ে বড় হয়ে থাকে। শিশু যখন খেতে চায় না বা কাঁদতে চায় তখন তার বাবা-মা স্মার্টফোন তার হাতে তুলে দিচ্ছে।সেতো শৈশব থেকেই স্মার্ট ডিভাইসের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলছে। যা পরবর্তীতে নেশায় পরিণত হয়।

 কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে স্মার্ট ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার কখনই আপনার বা আপনার শিশুর জন্য শারিরিক বা মানুষিক ভালো কোন কিছু বয়ে আনবেনা।যে কারণে দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই সময় থাকতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

 নিয়মিত ধ্যান এবং যোগব্যায়াম করুনঃ

নিজেকে সুস্থ ও ফিট রাখতে চায়লে মেডিটেশন এবং যোগব্যায়ামের উপকারিতাগুলোকে  বলে শেষ করা যাবে না। নিয়মিত ধ্যান আমাদের স্নায়ু শিথিল করার পাসাপাসি চাপ কমাতে খুবই সাহায্য করে থাকে। আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যেকোনো কাজের আগ্রহ বাড়াতে মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে যোগব্যায়াম মাধ্যমে দীর্ঘ সুস্থ এবং ফিট রাখতে একটি প্রাকৃতিক উপায়।

 কারণ যোগব্যায়াম আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সক্রিয় ও কর্মক্ষম রাখতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। তাই সুস্থ ও নিজের ফিগার ঠিক রাখতে চাইলে এই দুটি পদ্ধতি নিয়মিত অনুশীলন করুন।

[hupso]