» সিলেট-২ পরাজিতরা একাট্টা পুনঃ নির্বাচনের দাবী

প্রকাশিত: ০৮. জানুয়ারি. ২০২৪ | সোমবার

রবিবার (৭ জানুয়ারি) বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঘটেনি বড় বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে টানা ভোটগ্রহণ। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১০৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ১৯ জন হাসেন বিজয়ের হাসি।

সিলেট জেলার ৬টির মধ্যে ৫টি আসনে নৌকা ও একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে রবিবার ভোট চলাকালীন ও ভোট শেষে ‘সুষ্ঠু পরিবেশ নেই’ অভিযোগে সিলেটের ৩টি আসনের ৭ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এর মধ্যে সিলেট-২ আসনের ৪, সিলেট-৩ আসনের ২ ও সিলেট-৪ আসনের একজন।

এই ৭ জনের মধ্যে সিলেট-২ আসনের ৪ প্রার্থী সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে মহানগরের পূর্ব জিন্দাবাজারের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন তাদের অভিযোগগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন বর্জনকারী সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরমেয়র মুহিবুর রহমান এবং তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন- গতকাল (রবিবার) যেটি হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ একটি প্রহসনের নির্বাচন। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও ইলেকশন কমিশনের কথায় বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। গতকালের এটি কোনো নির্বাচনই ছিলো না তাই আমরা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের এজেন্টদের মারধর, কেন্দ্রে করে জোর করে বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে টেবিল কাস্টসহ ব্যাপক অনিয়মের কারণে আমরা ১২টার আগেই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। পরে বেলা ২টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেই আমরা চারজন। আমরা সবাই গতকালের সিলেট-২ আসনের সব কেন্দ্রের ভোট ও ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং আবারও নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আমাদের আইনজীবির সঙ্গে পরামর্শ করে দু-এক দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবো।

গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান বলেন- গতকাল আমরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় ও ইলেকশন কমিশন থেকে আমাদেরকে বার বার বলা হয়েছে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফ্রি এন্ড ফেয়ার হবে। কিন্তু তাদের কথায়-কাজে মিল পাওয়া যায়নি, প্রহসনের নির্বাচন উপহার দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন- আমাকে একটি সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রেখে নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা টেবিল কাস্ট করেছেন। আমি বার বার ফোন করেও নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি প্রায় দুই ঘণ্টা তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। এরপরই আমরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের এজেন্টদের নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা অনেক কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়নি, অনেক কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন বর্জন করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিলো না।

তবে রবিবার ভোট চলাকালে সিলেট বিভাগে কয়েকজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করছে ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ওই প্রার্থীরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। দুপুরের পর থেকেই প্রার্থীদের থেকে এই ঘোষণা আসতে থাকে।

তৃণমূল বিএনপির আব্দুর রব মল্লিক বলেন- আমি একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, আগের রাতেই ৩৮টি কেন্দ্রের ব্যালট প্যাপারে নৌকায় সিল মারা হয়ে গিয়েছিলো। আমরা এই ৪ প্রার্থী দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়েছি। সেখানকার সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা এখানেও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। একটি প্রহসনের নির্বাচন আমাদেরকে উপহার দেওয়া হয়েছি। আমরা এ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃভোটের আবেদন করছি। পাশাপাশি আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।

উল্লেখ্য, ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট-১ আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আসনে কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছাম উদ্দিন চৌধুরী ও সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সিলেট জেলার ৬ আসনে ২৯.৪৬ ভাগ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান।

[hupso]