» আমদানীমূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্দ পাথর ব্যবসায়ীরা, আমদানী বন্ধ

প্রকাশিত: ১৩. জানুয়ারি. ২০২৪ | শনিবার

৮ জানুয়ারি থেকে সিলেটের দুটি স্থলবন্দর ও ৫টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি স্থগিত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রতিদিন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

 
চার মাসের মধ্যে দুইবার পাথর ও চুনাপাথর আমদানিতে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (আমদানি মূল্য) বাড়ানোতে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে- সারা দেশে যে অ্যাসেসম্যান্ট ভ্যালু আছে তার চাইতেও সর্বনিম্ন হার সিলেটে নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, বর্ধিত ভ্যালু যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হবে না ততক্ষণ তারা পাথর ও চুনাপাথর আমদানি থেকে বিরত থাকবেন। 

অন্যদিকে সিলেট শুল্ক বিভাগ বলছে, আমদানি বন্ধ হলেও কোনো সংকট দেখছেন না তারা। আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই তাদের। 

জানা গেছে, সিলেট সীমান্তের কাছে ভারতের পাথর-চুনাপাথরের খনি সমৃদ্ধ মেঘালয় রাজ্য। ফলে অন্য স্থানের তুলনায় কম পরিবহণ খরচ ও কিছুটা কম দামে মেঘালয় থেকে পাথর আমদানি করেন সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্যমতে, প্রতি টন পাথর ও চুনাপাথর সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ডলারে তারা আমদানি করেন। তবে এই পাথরের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ নিম্নমানের থাকায় তা ফেলে দিতে হয়। তবুও গত বছরের জুলাই পর্যন্ত শুল্ক বিভাগ আমদানি মূল্য নির্ধারণ করেছিল পাথর ১১ ডলার ও চুনাপাথর সাড়ে ১১ ডলার। যদিও এই হারে শুল্ক পরিশোধ করে তেমন লাভ থাকে না ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে হঠাৎই গত বছরের আগাস্টে আবারও পাথর ও চুনাপাথরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ১ ডলার বাড়িয়ে পাথর ১২ ডলার ও চুনাপাথর সাড়ে ১২ ডলার করে চিঠি দেয় শুল্ক বিভাগ। সে সময়ও ক্ষুব্ধ হয়ে আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ৪ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৭৫ সেন্ট বৃদ্ধি নির্ধারণ করে নতুন অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু দাঁড়ায় পাথরের ক্ষেত্রে ১১.৭৫ ডলার আর চুনাপাথরের ক্ষেত্রে ১২.২৫ ডলার। এই হারে শুল্ক দিয়ে লাভ কম হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যখন হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, ঠিক তখনই ৪ জানুয়ারি আবারও অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ১.২৫ ডলার বৃদ্ধি করে পাথরের ক্ষেত্রে ১৩ ডলার আর চুনাপাথরের ক্ষেত্রে ১৩.৫০ ডলার নির্ধারণ করে চিঠি দেয় সিলেট শুল্ক বিভাগ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৮ জানুয়ারি থেকে সিলেট বিভাগের দুটি স্থলবন্দর ও ৯টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

শুল্ক বিভাগের তথ্যমতে, সিলেট অঞ্চলের দুটি স্থল বন্দর ও ৫টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টন পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হয়। গড়ে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। আমদানি বন্ধ থাকায় এ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

অন্যদিকে, পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, সারা দেশে যে অ্যাসেসম্যান্ট ভ্যালু আছে তার সর্বনিম্ন হার তারা সিলেটে নির্ধারণ করেছেন। এটা আইন মেনেই করা হয়েছে। সিলেটের জন্য একবারে চাপিয়ে না দিয়ে দুই ধাপে গত আগস্টে ০.৭৫ ডলার আর এই জানুয়ারিতে ১.২৫ ডলার বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে, শুল্ক কর কমানোর দাবিত রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন পাথর-চুনাপাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর পয়েন্টসংলগ্ন মহাসড়কে এবং ভোলাগঞ্জ বাজারে প্রতিবাদ মিছিল করেন পাথর আমদানি-রফতানি  সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। এতে শতাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। 

 

শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের দাবি- শুল্ক কমিয়ে পাথর আমদানি ও রফতানির সুযোগ দেওয়া হোক।

[hupso]