- সিলেটের রিজেন্ট পার্ক যুবক- যুবতীদের অনৈতিক কাজের নিরাপদ জোন
- সিলেটে বেড়েছে ভুঁইফোড়দের দৌরাত্ম্য
- সিলেটে ৩ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাইপণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)
- সিলেট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি আবদাল, সম্পাদক জোবায়ের
- দুই বছর ধরে অনুপস্থিত বেতন তুলতেন নার্সিং কর্মকর্তা!
- সুনামগঞ্জে মামলা আলোচনার ভিত্তিতে আপসরফা
- আজহারীর মাহফিলের পর একটি চুরি ও ২৫ জিডি করা হয়েছে
- শাবি’র ২৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
- সিলেটে ৫৪ বছর পর সন্ধান মিললো পাঁচ শহীদের
- মেয়ের সম্ভ্রমহানি, খবর শুনে মা রা গেলেন বাবা
» সিলেটে বেড়েছে ভুঁইফোড়দের দৌরাত্ম্য
প্রকাশিত: ১৯. জানুয়ারি. ২০২৫ | রবিবার
বিভাগীয় শহর সিলেটে ব্যঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে সাংবাদিক সংগঠন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন কতিপয় ভুঁইফোড় সাংবাদিক। এসব ভুয়া সংগঠনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি প্রশাসনিক সেক্টরে চলছে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। কোনোধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই প্রশাসনের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তি তাদের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন অনুষ্ঠানে। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউও এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। আবার কিছু রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ উঠছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিপিএল খেলায় মূলধারার অনেক সাংবাদিক পাসকার্ড না পেলেও ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের কার্ড গলায় ঝুলিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই তালিকায় একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলও রয়েছেন। এছাড়া সিলেটের কয়েকটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় টাকার বিনিময়ে কার্ড বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় সাংবাদিক সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে শিশুধর্ষণের মামলা। এছাড়া অনলাইন সাংবাদিক সংগঠনের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগের পাশাপাশি নৈতিক স্খলনের অভিযোগ রয়েছে। এতে মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন মূলধারা সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও। এভাবে চলতে থাকলে সিলেটের শত বছরের সাংবাদিকতার গৌরবোজ্জল ইতিহাসে কলংকের কালিমা লেপনের শঙ্কায় অনেকেই।
অথচ এক সময় সিলেটের সাংবাদিকতার সুনাম, মান ও মর্যাদা দেশজুড়ে সমাদৃত ছিল। সবমহলের সব ঘরানার পেশাদার সাংবাদিকরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। সিলেট প্রেসক্লাব ছিল এর মূল নেতৃত্বে। দীর্ঘদিন সিলেট প্রেসক্লাব পেশাদার সাংবাদিকতায় তার গৌরবোজ্জল নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাও ধরে রেখেছিল।
একসময় ঠুনকো অভিযোগ তুলে সিলেট প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে আলাদা আরেকটি ক্লাব করেন কিছু ক্লাব সদস্য। পতিত আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সুবিধাভোগীরা প্রেসক্লাব ভাঙনে ছিলেন অগ্রণী। এরপর পেশাদার থেকে পেশার চাইতে সংখ্যার পাল্লা ভারী করতে ভুইফোঁড় ও ভুয়া সাংবাদিকদের সংগঠনের সদস্য করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতিকালে মহানগর, বিভাগীয় ইত্যাদি নানান নামে সিলেটে নাম সর্বস্ব প্রেসক্লাব গজিয়ে উঠেছে। মূলত বিভিন্নভাবে প্রশাসন এবং নানান প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজির সূত্র ধরেই তাদের এই গজিয়ে ওঠা। একসময় তারা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আয়োজনে দাওয়াতও বাগিয়ে নেয়। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা তাদের সেই সুযোগ করে দেন। বিশেষ করে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। স্বাধীনতার সপক্ষ, সরকার সংশ্লিষ্ট ইত্যাদি কথা তুলে তারা বিভিন্ন সুবিধা বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করে।
জুলাই বিপ্লবের পর ধারণা করা হয়েছিল এসব অপসাংবাদিতার রাশ টানা হবে। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে রাশ টানার বদলে আরও বেড়েছে ভুঁইফোড়দের দৌরাত্ম্য।
তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), নিউজ পোর্টাল, যত্রতত্র ফেইসবুক লাইভ, প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছেন এসব ভুঁইফোড় সাংবাদিক। অথচ তাদের এসব চ্যানেলের কোনো অনুমোদন নেই। শুধু পেশা পরিবর্তন করেই হয়ে যাচ্ছেন ‘সাংবাদিক’।
সিএনজি ড্রাইভার, মাছ বিক্রেতা, কাঠমিস্ত্রি, মুদি দোকানদার, হলুদ মরিচ বিক্রেতা, সুদ কারবারি, ব্যাটারি বিক্রেতা, চিকিৎসকের সহকারী, কিন্ডারগার্টেনের সাবেক শিক্ষক, একসময়ের ছিনতাইকারী থেকে রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অলিগলি থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর। সংবাদ লিখতে না পারলেও গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কথিত এসব সাংবাদিক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সাংবাদিকতার বুনিয়াদী প্রশিক্ষণও তাদের নেই। অনিবন্ধিত অনলাইন নির্ভর কিছু মাধ্যমে এসব কথিত সাংবাদিকরা সেসব প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখিয়ে স্থানীয় সুধীজনকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এদের কেউ কেউ গণ্যমান্য ব্যক্তি বা সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রচার করে। এসব সংবাদ প্রচারের পর নিজেরাই সেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সাথে লোক মারফত যোগাযোগ করে চাঁদা দাবি করে।
জুলাই বিপ্লবের পর দেখা যাচ্ছে কয়েক দিন পরপরই এইসব ভুঁইফোড়রা তাদের ক্লাবের নামে রিইউনিয়ন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা নানান দিবস সামনে রেখে বর্ণাঢ্য আয়োজন করছে। এসব অনুষ্ঠানে তারা নতুন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের অতিথি করছে। বিশিষ্টজনের সাথে পরবর্তীতে তাদের ছবি দেখিয়ে লুফে নিচ্ছে নানান ফায়দা। করছে চাঁদাবাজি। এতে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার দায় ও মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, সিলেট প্রেসক্লাবকে ঘিরে সিলেটের সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটেছে। যোগ্যতাসম্পন্ন বহু সাংবাদিক তৈরি হয়েছে। যারা দেশে বিদেশে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। নানান কারণে সিলেটের সাংবাদিকদের মাঝে বিভাজন তৈরি করা হয়। সেই সুযোগে আনাচে কানাচে সাংবাদিক সংগঠন গড়ে উঠছে। ফলে ন্যায় নিষ্ট সাংবাদিকতা কলুষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ব্যাপারে সরকারের একটা নীতিমালা করা প্রয়োজন। শিক্ষার পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতার সমন্বয়ে সাংবাদিকদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে পারলে সাংবাদিকতার অঙ্গন অনেক সমৃদ্ধ হবে। সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা দূর করতে মূলধারার সাংবাদিক ও সরকারকে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাংবাদিকদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিপদে আপদে সব সময় সিলেটের পেশাদার সাংবাদিকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছি। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সিলেট প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে সাংবাদিকতার গৌরবোজ্জল ইতিহাসের স্বাক্ষী আমি নিজেও।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক নামের অপসাংবাদিকদের উৎপাতে আমি বিস্মিত। বিগত ১৭ বছরে আমরা টানা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তখন এতো সাংবাদিক দেখিনি। সম্প্রতি বিপিএল খেলা চলাকালে আমি নিজেও দেখেছি সাংবাদিক নামধারি ফ্যাসিবাদের দোসর ও ভুয়া সাংবাদিকরা গলায় কার্ড ঝুলিয়ে মহড়া দিচ্ছে। অথচ মূলধারার অনেক সাংবাদিককে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক অবস্থান থেকে আমাদের তেমন কিছুই করার থাকেনা। তবে বিবেকের জায়গা থেকে আমি বিতর্কিত সংগঠনের অনুষ্ঠানগুলো বয়কট করে থাকি। সংবাদটি দৈনিক জালালাবাদের