- সিলেটে সাংবাদিক তুরাব হত্যায় সাবেক ওসি মঈন গ্রেফতার
- মুনতাহার খুনিরা নারী, হয়ে উঠেছিলেন বর্বর নিষ্ঠুর ঘাতক!
- সিলেটে ছাত্র- জনতার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারে সহায়তা প্রদান
- যে জাতি যত মেধাবী সে জাতি তত উন্নত ——সিকৃবি ভিসি ড. আলিমুল
- বাকৃবিতে সিকৃবি ভিসি ড. আলিমুল ইসলামের সংবর্ধনা
- সিলেট ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
- আদানি গোষ্ঠীর বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হবে ভয়াবহ
- শেখ পরিবারের বারোটিসহ মোট চৌদ্দটি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন
- সিলেট জেলাও দায়রা জজ আদালতের পিপি পরিবর্তন
- তিন মেয়রের ব্যর্থতার পর ব্যর্থ যৌথবাহিনীর প্রচেষ্টা
» সিলেটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তোলপাড়
প্রকাশিত: ২৪. আগস্ট. ২০২৪ | শনিবার
একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তুমুল আলোচনা সিলেটে। কেউ বলছেন একে ফোরটি সেভেন। কেউ আবার এমআর সিক্সটিন, কেউ বা এটিকে বলছেন স্নাইপার। ভয়ঙ্কর সেই অস্ত্র। যেটি অতীতে কখনো সিলেটের রাজপথে প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয়নি। নানা সময় সিলেটের রাজপথে রাজনৈতিক ক্যাডাররা অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। শাবি’র নামকরণ বিরোধী আন্দোলন, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটের আগে নানা ধরনের অস্ত্র দেখা গেছে। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর অস্ত্র নিয়ে অতীতে কখনোই কেউ প্রতিপক্ষ ঘায়েল করতে নামেন নি। কিন্তু এবার ২রা আগস্ট থেকে ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত সিলেটের রাজপথে ভয়ঙ্কর এসব অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আর এ অস্ত্রের ব্যবহারে চলে গেছে তাজা প্রাণ।
কেউ আবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই অস্ত্র বহন করেছিলেন শিপলু নামের একজন। পুরো নাম রুহুল আমীন। অনেকটা অপরিচিত এই শিপলু। আন্দোলনের সময় সিলেটের রাজপথে এই অস্ত্রের সঙ্গে শিপলুর নামটি আলোচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে শিপলুকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। কে এই শিপলু- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে; শিপলু যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। ওখানে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ২০ শে জুলাই শিপলু সিলেটে আসেন। এরপর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে রাজপথে নামেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে; সিলেটে এবার প্রথম অস্ত্রের মহড়া শুরু হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন হওয়ার কারণে শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর চোখ রাঙানির পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন হয়। পরে আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের সি ব্লকের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত শাহ’র ৪২৩ নম্বর রুম থেকে দুটি পিস্তল সাধারণ শিক্ষার্থীরাই খুঁজে বের করে। এরপর ২রা আগস্ট থেকে শাবি ফটক ও মদিনা মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা অস্ত্র প্রদর্শন শুরু করে। ৩রা আগস্ট যেদিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা যায়, সেদিন পুলিশকে পেছনে রেখে ফ্রন্টলাইনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সুরমা আবাসিক এলাকায় অনবরত গুলি ছুড়ে। গুলির শব্দে ওইদিন সুরমা আবাসিক এলাকা প্রকম্পিত হয়। এর আগে ২রা আগস্ট ও ৪ঠা আগস্ট ওই এলাকায়ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মদিনা মার্কেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান, তার সশস্ত্র ক্যাডার আজহার উদ্দিন সুমন, কুখ্যাত পাঙাস ও আরেক অস্ত্রবাজ তুহিনের নেতৃত্বে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওইদিন এসব এলাকায় সুবিদবাজার এলাকার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে মুরগি হান্নানের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র অস্ত্রবাজ মাঠে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলি ছুড়ে। পুলিশ যখন ছাত্র বিক্ষোভ দমাতে ক্লান্ত তখনই এই সব অস্ত্রবাজরা পুলিশের প্রক্সি হিসেবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে। এতে ওই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন কয়েকশ’ শিক্ষার্থী।
৪ঠা আগস্ট সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- আগের দিন ঘোষণা দিয়ে ৪ঠা আগস্ট নগরের কোর্ট পয়েন্টে বেলা ১১টার পর অবস্থান নিয়েছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সঙ্গে ছিলেন সিলেট বিএনপিসহ বিরোধী বলয়ের কর্মীরাও। দুপুরের দিকে পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে ওই এলাকায় তাদের সরিয়ে দিলে রাজপথ দখলে নেয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এরপর থেকে সিলেট আওয়ামী লীগের উপ-গ্রুপের সশস্ত্র ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু করে। এ সময় দফায় দফায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। আর এ সময় ওই সব এলাকায় শত শত রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর এ সময় শিপলু ও তার অস্ত্রের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। এ ছাড়া আফতাব ও আব্দুল হান্নান দলবল নিয়ে ওইদিন কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টাসহ নগরে অবস্থান নিয়েছিলো।
এর বাইরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পীযূষ কান্তি দে তার দলবল দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। পীযূষের সঙ্গে থাকা তার এক সহযোগীর হাতে ছিল তার সেই বহুল আলোচিত দু’নলা বন্দুক। এ ছাড়া শটগান হাতে যুবলীগ নেতা জাহেদ, মুনিম অখিলি, সজল দাশ অনিক, শান্ত, আলোচিত টিলাগড়ের ভয়ঙ্কর অস্ত্রবাজ আনসার, এমসি কলেজের দেলোয়ার হোসেন রাহী, সরকারি কলেজের রুহেল আহমদ, নাজন আহমদ, ছাত্রলীগের তানভীর, কাশ্মির গ্রুপের সৈকত চন্দ্র রিমী, গৌরাঙ্গ দাশ সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। তারা ওইদিন গুলিবর্ষণ করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
নগর ও জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও থানা, ফাঁড়ি থেকে খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে কাজ চলছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে জনমনে আতঙ্ক কাজ করবে। ফলে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে প্রশাসনের তরফ থেকে দেখা হচ্ছে বলে জানান তারা। সুত্র: মানবজমিন
[hupso]